মঈদুল
মঈদুল স্কুল টিফিনে আমার জন্য একটা করে বেশি রুটি আনতো,
আমার অঙ্ক বইটা ঘনাদার দোকান থেকে ঐ কিনে দিয়েছিল,
সাইকেল সারানোর টাকাটা আজও দেওয়া হয়নি,
ওর জন্মদিনে ওর আম্মু আর আব্বু ওর সাথে আমার জন্যও একটা পাঞ্জাবি কিনেছিল,
শুধু আমি ওর জন্য কোনোদিনও কিছু করিনি।
কোচিনের শেষে আমরা সাইকেল চালিয়ে নদীর পাড়ে যেতাম,
সেখানে দাঁড়িয়ে আমরা পাখিদের উড়ে যাওয়া দেখতাম,
দেখতাম আকাশ পেরিয়ে যেখানে নদী মিশে আছে।
সাবিনার সাথে ঝগড়া হওয়ার পর প্রথমবার কাঁদতে দেখেছিলাম মঈদুলকে,
বলেছিল পাহাড় চলে যাবে,
আমাকে প্রশ্ন করেছিল, আমিও যাবো কিনা?
মঈদুল,
সাম্যের কথা বলতো,
নিরপেক্ষতার কথা বলতো,
ভালোবাসার-ভালোথাকার কথা বলতো,
শিক্ষার কথা বলতো,
লড়াইয়ের কথা বলতো,
বেঁচে থাকার কথা বলতো।
আমি শুনতাম।
সেবার যখন গ্রাম খুব উত্তাল হলো,
মঈদুলের বাড়ি গিয়ে দেখি,
আব্বুর কাটা শরীরটা নিয়ে উঠানে বসে আছে,
আমাকে দেখে জড়িয়ে হাউহাউ করে কেঁদে উঠলো,
সেই পুরোনো কান্না।
আমি হিন্দু ঘরের ছেলে,
আমাকে ধর্ম শিখিয়েছে ওদের ঘৃণা করো,
আমাকে রাষ্ট্র শিখিয়েছে ওদের ঘৃণা করো,
শুধু মঈদুল কখনো এমনটা শেখায়নি।
উদয়ন পলিমার সায়েন্স নিয়ে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণারত।
আপনার প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা, ইত্যাদি আমাদেরকে পাঠাতে ইমেইল করুন এই ঠিকানায় : letters@timesofcorona.com বা timesofcorona@gmail.com